4:
27am
বউ,
সত্যিই জানিনা! এখন পর্যন্ত তোমায় বউ বলে ডাকবার অধিকার আমার কাছে আছে নাকি নেই। তবে এটুকুই
শুধু মানি যে, আমি তোমায় বউ বলে বিশ্বাস করেছি, মেনেছি। আমার সমস্ত কিছু দিয়ে
তোমায় আপন করে নিয়েছি। সমস্ত দ্বিধায় তুমি আঁকড়ে আছো, প্রলোভন দিয়ে বাঁচো। এমন
অঙ্গীকারবদ্ধ প্রাচীন আমি, যে শুধু তোমায়
চেয়েছে প্রতিটি অনুরাগ আর অনুভূতির বিসর্জন দিয়ে। অকালে ঝরতে ঝরতে একদিন ঠিক হয় তো
পুরোটা ঝরে যাবো। সরে যাবো কালের দূরে অতল গভীরে। সেদিন হয়তো পাশ ফেরানো আমার মুখ
আর তুমি দেখবে না। অন্ধকারে অন্য একটি হাত ছুঁয়ে আমায় মনে পড়বেনা। ততদিনে হয়তো বা
দামি হয়ে উঠবো আমার মুছে যাওয়ার ঘটনা জুড়ে। পালিয়ে বেড়াবো তোমার ছায়া থেকেও।
ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে চাপা কান্নার আর প্রয়োজন হবে না। একটি কথায় যদি বুঝাতে যাই তবে
সেটা হবে, শুধুই ভুলে যাওয়া। এর থেকে বেশি আর কি পারবে বল?
থাক সে সব কথা। এবার না হয় অন্য কিছু বলি সাথে ভিন্ন কিছু খুলি। ভিন্ন কিছু
কি হতে পারে? শুধুই কি দুজনকার মাঝের দূরত্ব? নাকি যে ভালোবাসার মৃত্যু হয়েছে বলে
আজও দুজন মেনে চলেছি? বড্ড এলোমেলো হয়ে গেল সবকিছু। জীবনের প্রাপ্তিটুকু হিসেব
চাইলে হয়তো তাকে বার বার ফিরিয়ে দিতে হবে। সে আমার একার ব্যার্থতা নয়। একটা মানুষের
জীবন কখনোই তার একার হতে পারে না। বরং জীবন যার একা তার কিছুই নেই। তাকে অল্পতেই
ছুড়ে ফেলবার অধিকার মানুষ পেয়ে যায়। তাতে
প্রিয় আর অপ্রিয় বলে কিছু নেই। আমরা তবে কেমন ছিলাম?
এখনও যখন কথা হয় প্রদীপ খানিকটা নিভু আলোতেই জ্বলতে থাকে। বেফাঁস কিচ্ছুটি
মনে আসে না শুধু অতীত আচরণ ছাড়া। বার বার এভাবেই তোমায় প্রিয় সুরে চাই, গান গেয়ে
যাই অথবা বন্ধ চারটি দেয়ালের একটি কোণে তোমায় পাই। যেভাবে রাখবে বলে ভেবেছিলে,
যেভাবে চিনবে বলে ঠিক করেছিলে, যে আলোয় দুজনার ভোর একসাথে ফুটতো, যে কথা দিয়ে
হাতটি ধরেছিলে কোথায় গিয়েছে সে সব কথা? কিসের ভীর দেখে তারা দূরে সরে গেল? তুমি
যদি আসতে নিষেধ করে থাকো তবে তারা আমায় কেন ছেড়ে গেল? খুব জানতে ইচ্ছে হয়। আবার
ভয়ও হয়।
জীবনের অনেকটাই অলস থেকেছি। অনুপাতের হিসেব জানা থাকলে এতদিনে একটা ছোটখাট
অনুসর্গ রচনা করে ফেলতাম। যার ভাষায় থাকতে তুমি আর অলীক হতাম আমি। কিছু বেলায় অসরল
হয়ে ঘুরে বেড়াতাম লুকোচুরি খেলে। যে খানিকটা সময় জুড়ে তুমি হারমোনিয়ামের সুর ওঠাতে
ব্যাস্ত সেটুকুই আমার ফিরবার সময় হত। তোমার কণ্ঠের প্রথম সুরে আমি আমার শেষ দেখতে
চাইতাম। বেপরোয়া মন সবকিছুতেই
পরুয়া করতে চাইতো যদি দুটি পথ এক হতে হতে, এক হয়ে
যেত।
ভেবে দেখো তো, যদি একটি নামে দুজনকেই যেত চেনা? যদি দুজনই প্রতিটি নতুন
ছাপা বইয়ের ভাঁজে আতরের সুবাস হয়ে থাকতাম আর লোকের কাছে হতাম কেনা? তবে কি ভাল হত
না? সে সুবাসে তোমায় আর সকলে তো ঠিক পেয়ে যেত। তবে কেন এই অমোঘ আমি, মিছেমিছি সব
পুড়িয়ে জলে নামি? একার মাঝে একা একা কেন আমিই সঙ্গগামী?
দহনের পাশে অহন কেন হলাম? নিজেকে সামলানোর গুরু দায়িত্ব অযাচিত মনে কেন
নিজেকেই নিতে হল? মরক ভুলে আমি কেন পাপের কাছে আরও ঋণী হলাম? হাজার হাজার কেন’র আজ
শুধু প্রশ্ন বেঁচে আছে। উত্তরগুলো হয় তো গোয়াল ঘরে থাকা গাভীটি চিবিয়ে চিবিয়ে
খেয়েছে। কে জানে, সে কতটা আরাম করে খেয়েছে ! নাকি তারও গিলতে আমারই মতন অনেক কষ্ট
হয়েছে?
যে পিছলে পড়া নিয়মের কথা সবচেয়ে বেশি অনুধাবন করেছি মাস কিংবা কয়েকটা বছর ঘুরিয়ে
সে যে কেন আমায় ছেড়ে যেতে চাইল না, সেটাই ভাবি! তার অনুরোধ রাখতে গিয়ে শুধু একবার
নয়, বহু বার হিসেব করতে করতে আটকে গিয়েছি অচেনার হালে। একটু বিশ্রাম চাই। জড়িয়ে যাবার
অলক্ষনে যেন কোন খামতি না থাকে। বিদ্রোহী যদি সাজে মন তবে সে যেন হয়েছে অপরের
নির্মমতায়, তোমার ঠুনকো ভালোবাসায়।
না বলা অনেকগুলো কথা আজ বলা হয়ে গেল তোমায়। জানিনা কোন শব্দের মানে তোমার
কাছে ভীষণ তেতো লাগবে। কোন একটি কথা ধরে হয়তো তুমি অভিমানে আমায় আবার লিখা বন্ধ
করে দিবে! মিনতি করে বলছি তোমায়, দয়াকরে বিকল্প কিছু আর ভাবতে বসে যেও না? মাঝে
সাঝে চোখে যা পড়ে তা কেবলই চোখে পড়ার জন্যই পড়ে। অন্তরে নেবার জন্যে নয় তা। ভাল
থেকো, ভাল রেখো।
তোমার,
এক সময়কার প্রিয়...